শেষ হলো টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থার বর্নিল বার্ষিক উৎসব ২০২৩
আহমেদ হোসেন: জয় সরকার, লোপামুদ্রা মিত্র, মনোময় ভট্টাচার্য এর সংগীত আর পার্থপ্রতিম দেব এর পরিচালনায় ছোটদের নাটক, সঙ্গীত নৃত্য উপস্থাপনা সম্ভায়া, নৃত্যকাব্য কোলাজ নহন্যাতে, টিএসএস কয়্যার, চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষের কর্ম নিয়ে ‘স্মরণের প্রহরে” ও অন্যস্বর টরন্টো প্রযোজনা ” যেথায় থাকি যেখানে বাঁধন আছে প্রাণে প্রাণে” কাব্যগীতি আলেখ্যানুষ্ঠানের মধ্যে টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থার দুইদিনব্যাপী উৎসবের সফল সমাপ্তি হল গত মে ২০ – ২১, ২০২৩ শনিবার, রবিবার স্থানীয় একটি অডিটোরিয়ামে।
২০০৪ সালে কয়েকজন আড্ডাবাজ বাঙালির চিন্তার ফসল টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা (টিএসএস)। কফির আড্ডায় নষ্টালজিক মনের গান-কবিতা-নৃত্যকে তুলে এনে এই প্রবাসে উপস্থাপন করা এবং এখানকার বাঙালী প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করার লক্ষ্য টিএসএস সেই থেকে আয়োজন করছে বার্ষিক পারফর্মিং আর্ট উৎসব ।
২০০৪ সালে দীপক অধিকারী, ২০০৬ সালে কবি ব্যানার্জি আর ২০১১ অরুন চক্রবর্তী। ২০১৪/১৫/১৬ অরুন (রাজকুমার) বিশ্বাস, ২০১৭/১৮/১৯-শান্তনু চৌধুরী, ২০২০/ ২১/২২ ধ্রুব ঘোষ ছিলেন টিএসএস এর প্রেসিডেন্ট।
টিএসএস অনুষ্ঠানে বক্তার পর বক্তা কখনোই থাকে না। তার ব্যত্যয় নেই এবছর। চলতি প্রেসিডেন্ট সৌরভ চ্যাটার্জী সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।তেমনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সেক্রেটারি জেনারেল অনুপ সেনগুপ্ত । প্রজন্মকে সুকুমারবৃত্তির চর্চায় উৎসাহ প্রদান ও প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে বাঙালিত্বের, মূল চেতনার এবং ঐতিহ্যের অধিকার সবার ভেতর ধারণ এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধনের চেষ্টা। সে-লক্ষ্যে প্রথম থেকেই একের পর এক শিশু-কিশোরদের প্রযোজনা আনছে মঞ্চে তারা।
প্রথম দিন- চোখের দেখা প্রাণের কথা
বলা যায় “সম্ভায়া” দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে প্রেসিডেন্ট সৌরভ চ্যাটার্জীর বক্তব্যের পর লাইফ টাইম এচিভমেন্ট পদক দেয়া হয় গোবিন্দ সাহা এবং কল্যাণী সাহা- কে। এরপরে মঞ্চে আসেন নাট্য অভিনেতা নির্দেশক পার্থপ্রতিম দেব এর নির্দেশনায় “কানাডিয়ান আইডল”। এরপরই আসে ঋতু দাস দত্ত এর আবৃত্তির কোলাজ নৃত্যগীতের নানন্দিক উপস্থাপনা নহন্যাতে। ঘন্টাখানেক বিরতির পর মঞ্চে আসেন প্রথম দিনের আকর্ষণ কণ্ঠশিল্পী মনোময় ভট্টাচার্য। তিনি রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, গজল এবং আধুনিক গান গেয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন মধ্যরাত পর্যন্ত।
দ্বিতীয় দিন- চোখের দেখা প্রাণের কথা
রবিবারের অনুষ্ঠান শুরু হয় ” মুক্তধারা ” দিয়ে। এরপর চলচ্চিত্রকার ঋতুপর্ণ ঘোষ ” স্মরণে প্রহরে ” অনুষ্ঠিত হয়। এর পর সেক্রেটারি জেনারেল অনুপ সেনগুপ্ত সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন।বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক, একুশে পদক প্রাপ্ত কবি, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক আসাদ চৌধুরী- কে সম্মামনা দেয়া হয়। তারপর আহমেদ হোসেন এর নির্দেশনায় ফারিহা রহমানের গ্রন্থনায় অন্যস্বর টরন্টো , অন্যথিয়েটার টরন্টো এর প্রযোজনা ” যেথায় থাকি যে যেখানে বাঁধন আছে প্রাণে প্রাণে ” শীর্ষক কাব্যগীতি আলেখ্য অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসবের প্রধান আকর্ষণ লোপা মুদ্রা মিত্র এবং জয় সরকার মঞ্চে উঠেন বিরতির পর পর। টানা ঘন্টা দুয়েক দর্শক মাতিয়ে রেখেছিলেন দম্পতি কণ্ঠশিল্পীদ্বয়। তারা রবীন্দ্র সংগীত, লোকগীতি, আধুনিক গান পরিবেশন করেন। এবছর উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীজিত চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন অনিন্দিতা, মনিকা, চয়ন দাস, দিলারা নাহার বাবু।
প্রকাশনা – উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দৃষ্টিনন্দ স্মারক বের করে টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা।
লক্ষ্ণী যারা-
টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থার এই দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দর্শকশ্রোতাগন যেমন টিকেট কেটে সাহায্য করেছে ঠিক তেমনি বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দিয়ে, শুভানুধ্যায়ীরা – পৃষ্ঠপোষকগন অর্থ অনুদান দিয়ে আর শিল্পী কলাকুশলীরা শ্রম-সময়- মেধা দিয়ে উৎসবকে করেছে সার্থক –প্রানবন্ত- উচ্ছ্বল- রঙীন ।
জয়তু টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা (টিএসএস)-জয়তু বাঙালি কৃষ্টি আর মেধা ।