হাই কমিশনারকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় কাউতে গ্রেফতার করেনি কানাডা পুলিশ
নতুনদেশ ডটকম: কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি কানাডার পুলিশ। হাই কমিশনারের দায়ের করা অভিযোগটি পর্যালোচনার জন্য ক্রাউন এটর্নীর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই রাজধানী অটোয়ার পার্ববর্তী লাক ফিলিপি পার্কে’ বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি পিকনিকে অতিথি হিসেবে যোগ দিতে গিয়ে দূতাবাসের সাবেক একজন কর্মীর হাতে লাঞ্ছিত হন বলে জানা যায়। বাংলাদেশি পাসপোর্টের আবেদন করে না পাওয়া এবং হাই কমিশনারের ‘অশোভন’ আচরণে ক্ষুব্দ হয়ে এই কর্মী হাই কমিশনারকে লাঞ্ছিত করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানানো হয়।
তবে হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমান ইউসুফ হারুনের পাসপোর্টের আবেদনের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে ক্ষুদে বার্তায় হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান ‘নতুনদেশকে’ জানান,ইউসুফ হারুনের অটোয়ায় নিয়োগ, তার চাকুরীচূতি, পাসপোর্টের আবেদন, সেই আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়া সবকিছুই ঘটেছে তিনি এই মিশনে যোগ দেয়ার অনেক আগে।
যোগাযোগ করা হলে কুইবেকের ডি কুলিন্স পুলিশের মুখপাত্র লুই পিশে রোববার ইমেইলে ‘নতুনদেশ’কে জানিয়েছেন- মি. রহমান (হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমান) এই ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ বিভাগে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। তিনি বলেন, অভিযোগটি পর্যালোচনার জন্য ক্রাউন এটর্ণীর কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। পুলিশ এই মুহুর্তে এই ব্যাপারে এরচেয়ে বেশি তথ্য প্রকাশ করবে না বলে ওই মুখপাত্র জানান।
কী ঘটেছে:
ঘটনার তিন দিন পর ২০ জুলাই জনৈক জাফর আহমদ ‘কানাডায় বাংলাদেশ হাই কমিশনার ড, খলিলুর রহমানকে মারধোর করা হয়েছ ‘ বলে ইমেইলে একটি খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠান। এর পরই ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মন্ট্রিয়ল থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিবিএনএ২৪ ইমেইল বার্তাটি হুবহু প্রকাশ করে।একই সময়ে ঢাকার জাতীয় দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’ ‘কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে মারধোর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।
ঘটনটি সম্পর্কে জানতে ‘নতুনদেশ’ এর পক্ষ থেকে অটোয়া,কুইবেক পুলিশ, আরসিএমপিসহ কানাডা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজখবর করা হয়। কানাডা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়ার পরই ‘নতুনদেশ’ এই ব্যাপারে সংবাদ প্ররিবেশনের সিদ্ধান্ত নেয়।
জাফর আহমদের পাঠানো ইমেইলে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলা হয়, ’বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব অটোয়া ভ্যালী (বাকাওভ)’ আয়োজিত পিকনিকে যোগ দিতে গেলে হাই কমিশনের সাবেক কর্মচারী ইউসুফ হারুন হাই কমিশনার খলিলুর রহমানকে মারধর করেন। এ সময় তিনি চেঁচিয়ে উঠে বলেন, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। আমার অধিকার পাসপোর্ট দিচ্ছেন না হাইকমিশনার খলিল। এ সময় বাকাওভ এর কর্মকর্তারা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইউসুফ হারুন এ সময় বলেন, আমার মা-বাবা মৃত্যুপথযাত্রী। শা.. তুই আমাকে বাংলাদেশে যাইতে বাধা দেস। একথা বলেই হাইকমিশনার খলিলকে কিল ঘুষি মারতে থাকেন ইউসুফ হারুন। এরপর হাইকমিশনার খলিলকে ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন।পরে বাকাওভ এর কর্মকর্তারা পুলিশ ডেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।’
ইমেইলে জাফর আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘ইউসুফ হারুন দুর্নীতিবাজ হাইকমিশনার খলিলুর রহমানের অকূটনৈতিক সুলভ আচরনসহ নানা বিষয়ে সোচ্চার। এরই মধ্যে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী, সচিবসহ সরকারের উর্ধ্বতনদের কাছে হাইকমিশনারের বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। খলিলুর রহমান তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট আটকে রেখেছেন গত ছয় মাস ধরে। তাই রাগ হয়ে ইউসুফ হারুন এমন কাজ করেছেন বলে মনে করছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির সিনিয়র সদস্যরা।
তবে হাই কমিশনার ড. খলিলুর রহমান বলেছেন, কনস্যুলার সেবায় যে কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স অবস্থান, সব ধরনের আর্থিক লেনদেন কেবলমাত্র ব্যাংক ব্যবস্থায় গ্রহণের নিয়ম মধ্যস্বত্তভোগীসহ অনেককেই ক্ষুব্দ করে থাকতে পারে।