শোয়েব মোর্তজা-র একক গজল সন্ধ্যা
আহমেদ হোসেন: মূলত দুটো পঙ্ক্তি নিয়ে গজল। প্রতিটি খণ্ডকে ‘শের’ বলা হয়। কয়েকটি ‘শের’ নিয়ে গজলের গাঁথুনী। শের কখনও একই বক্তব্য নিয়ে রচিত হলেও আবার এতে কখনো কখনো বিভিন্ন বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা দেখা যায়। ভাষার লালিত্য, শব্দের ব্যঞ্জনায়, ছন্দের মাধুর্য গজলের বৈশিষ্ট্য। গজলের প্রথম শেরকে স্থায়ী এবং অন্যসব শেরকে ‘অন্তরা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। গজল গানে মূলত কাব্যিক ভাব প্রকাশিত। এইটুকু আমার গজল নিয়ে পড়াশুনার কথা।
আর বলি, বাঁশি বাজে কানে বাজে না। সঙ্গীতের সঠিক রসাস্বাদন করতে গেলে বোধহয় কানের, মনের, মগজের একটা প্রস্তুতি লাগে। সেটা সত্যি বলে মনে করি।
আবার এও বিশ্বাস করি উদার মনে বসে শুনলে সবই ভালো লাগার কথা। বলছিলাম ধরুন গজল শুনবেন। অথচ বিন্দুমাত্র ভাষা জ্ঞান নেই। কারণ বাংলায় আর কয়টা গজল হবে। বেশির ভাগ তো হবে উর্দু, ফার্সী কিংবা হিন্দিতে। বলি, তাতে ক্ষতি নেই। সুরের মূর্ছনা আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে। এবং তাই হলো আমাদের অনেকের বেলায়। যতটা আমার তারচেয়ে বেশি যে উর্দু, হিন্দি একদম জানে না তারাও বেশ প্রীত হয়েছেন দেখলাম। সবাই আহা, সাধু সাধু করছেন। হাততালি তো আছেই। সকলের হৃদয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে বুঝা যাচ্ছিলো। অনুষ্ঠানে অ-বাঙালি দর্শকশ্রোতা যেমন ছিলেন তেমনি ছিলেন উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক বাঙালী দর্শকশ্রোতা । একটি সার্থক অনুষ্ঠান। বলছিলাম বহুলকাঙ্খীত শোয়েব মোর্তজা এর একক গজল সন্ধ্যার।
গত ২৬ নভেম্বর ২০২২ টরন্টোস্থ আগা খান মিউজিয়াম অডিটোরিয়ামে হল ভর্তি দর্শক শ্রোতার উপস্থিতিতে অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে অনুষ্ঠিত হলো শোয়েব মোর্তজা এর একক গজল সন্ধ্যা।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা শুরু হয়ে ছোট একটি বিরতি দিয়ে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত একটা পর একটা গজল পরিবেশন করেন শোয়েব মোর্তজা। কণ্ঠের সাথে যন্ত্রসংগীতের সম্বন্বয় শ্রোতাদের বিমুগ্ধ করে রাখেন সারাক্ষণ। বাঁশিতে সাহিল খান, সন্তুর হারদায়াল সিং, গিটারে রাজন মসিহ, ভাইয়োলিনে তাকসিম আহমেদ , তবলায় ডেরিক জ্যায়করন এবং পারকাশনে এলেক্স মোহন দুর্দান্ত বাজিয়েছেন। অসম্ভব সুন্দর বোঝাপড়া ছিল পরস্পরের। এক পাতার এক নানন্দিক প্রকাশনা থেকে জানতে পারি অনুষ্ঠানের যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পীগন প্রত্যেকেই স্বনামে খ্যাত।
অধিকন্তু পুরো অনুষ্ঠানটি শিল্পী একা মাতিয়ে রাখেন। শোয়েব গজলের “শের’ এর কিছু কিছু ইংরেজি অনুবাদ করে গজলের কাব্যিক ব্যঞ্জনা শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন। কিছু হাস্যরস করেন যা দর্শকশ্রোতাদের অধিকতর আনন্দ দেয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী আলেয়া শরাফী। তাঁকে ডেকে নেন ইকরা মোর্তজা ।
ব্যক্তিগতভাবে শোয়েব এর কণ্ঠে গজল শুনেছি অনেকবার। মায়াবী দরদ দিয়ে তিনি শব্দ প্রক্ষেপণ করেন। ঠান্ডা মেজাজের গজল বেশি গাইতে পছন্দ করেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে গেয়েছেনও তাই। দর্শকশ্রোতার অনুরোধে অনেকগুলো বহুল পরিচিত গজল পরিবেশন করেন তিনি। ভাবতে অবাক লাগে ছোটবেলা থেকে সে নিজে নিজে শুনে শুনে গজল করা শিখেছেন। তার অনুপ্রেরণায় আছেন উপমহাদেশের খ্যাতিমান গজল সঙ্গীতশিল্পী মেহেদী হাসান, গোলাম আলী, জগজিৎ সিং, পঙ্কজ উদাস, হোসেন বকস্। শোয়েব বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতদের তালিম নিয়েছেন উস্তাদ আলি এফ,এম রেজওয়ান এর কাছে। ব্যক্তিগত জীবনে মেধাবী শোয়েব একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার।
বিনয়ী শিল্পী শোয়েব মোর্তজার জন্যে আমার নিরন্তর শুভ কামনা।