কেন কবীর সুমন?
সাখাওয়াত টিপু: ১. আমি অনেক দিন সমাজে ঘটমান অনাচারগুলো নিয়ে কথা বলি না। বললাম, এই জন্য যে কোন বিষয়ে আমরা নীরব থাকি, আর কোন বিষয়ে বলি তারও একটা রাজনীতি আছে। ব্যক্তিগতভাবে চাইছিলাম, কারো মুখ থেকে শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্ন আসে কিনা? সেটা কাউকে বলতে শুনিনি! দেখলাম, মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন কেউ তোলে কিনা?
২. আমার পড়াশোনা খুব বেশি নাই। তবে যতটুকু বুঝি, গান-শিল্প-সাহিত্য বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে আলাদা কিছু নয়। অনেকে জানেন উপমহাদেশে ধ্রুপদি গানের সঙ্গে খাদ্যের সম্পর্ক কতটুকু! অন্তত ধ্রুপদি শিল্পীদের জীবনী পড়লে এটা পরিষ্কার হয়। আমি আর বিশদ বলতে চাই না। এটুকুই বলি, সাংস্কৃতিক সম্পর্কগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে এটা সবসময় ঘটতে থাকবে, আজ কবীর সুমনের গান বন্ধ হবে, কাল হয়তো আরেকজন কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকের অন্যকিছু বন্ধ হবে। আর কিছুদিন পরপর বলতে থাকতে হবে অমুক সিনেমার মুক্তি চাই, অমুক গানের মুক্তি চাই। এই আর কি!
৩. মার্কসের সবচে প্রিয় ছিলেন অষ্টাদশ শতকের ফরাসি উপন্যাসিক বালজাক। তিনি বালজাককে পছন্দ করতেন এই জন্য, বুর্জোয়া সমাজের কাঠামো অন্তঃসার শূন্যতা পাওয়া যায় বলে। হয়তো দার্শনিক ব্যাখ্যার জন্য সুবিধা হয় তাতে। মার্কস তো বালজাকের বুর্জোয়া সমাজ কায়েমের জন্য তাঁকে পছন্দ করতেন না। করতেন ওই সমাজ কিভাবে ভাঙা যায় তার উত্তর খুঁজতে। এমন আরও হয়তো অসংখ্য উদাহারণ টানা যাবে।
৪. আমি সংবেদনশীল লেখক মানুষ। যে জিনিস আমি সংবেদনশীতার থেকে গ্রহণ করি সেটার বিচ্যুতি দেখলে আমার সমান প্রতিক্রিয়া হয়। সেটা আল মাহমুদ হোক কিংবা কবীর সুমন হোক। হয়তো আমি মায়াকোভস্কির মতো সংবেদনশীল নই, তাহলে আমাকে অনেক কিছু দেখতে হতো না। তবে আমি কিছুটা যুক্তিশীল বটে!
৫. যদি সুমনের গান শুনতেই হয়, তার ক্রয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে প্রশ্নটা করেছিলাম। এই যা!
৬. জার্মানিতে হিটলারের শাসন আমলে দুটো জিনিসের অভূত বিকাশ হয়েছিল। স্থাপত্যকলার অভাবনীয় উন্নয়ন আর সাহিত্য-দর্শনের উন্নয়ন। তাই বলে হিটলারের শাসন ভাল হয়ে যায় না। কিংবা সে সব দেখা বা পড়া বাদ দেয় না মানুষ।
৭. আমি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চাই। জনসংস্কৃতি মানুষের নাগালের বাইরে থাকুক সেটা চাই না। সেটা নাগালের বাইরে থাকলে সমাজে যা ঘটার তাই ঘটবে। তবে সেটার ফল সবাইকে একদিন না একদিন ভোগ করতে হবে। এখানে আপনি কিংবা আমি সাধারণ। না হলে শুধু দাবি জানাতে জানাতে একটা জীবন পার করব।
লেখক: সাখাওয়াত টিপু. কবি, প্রাবন্ধিক ও শিল্প সমালোচক
লেখকের ফেসবুক পোষ্ট