সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নামের উচ্চারণ বিতর্ক
শিশির ভট্টাচার্য: Annie Ernaux নামের সঠিক প্রতিবর্ণীকরণ কী হবে? ‘আনীঈ এ্যাখনো’ বা ‘আন্নি আখনো’ বা ‘আনি আর্নো’? আমি সেই যুক্তিগুলো দিচ্ছি, যেগুলো আমি ‘র্যাঁবো’ প্রতিবণীর্করণের পক্ষে লিখেছিলাম ২০১৪ সালে র্যাঁবোর কবিতার অনুবাদের দ্বিতীয় সংস্করণে:
“অবশেষে র্যাঁবো নামের বানানটি সম্বন্ধে দুটি কথা বলতেই হয়। প্রথম সংস্করণে আমি এই নামটি প্রতিবণীর্করণ করেছিলাম ‘খ্যাম্বো’। এই প্রতিবণীর্করণ অনেকে পছন্দ করেছিলেন। প্রয়াত নাট্যকার সাঈদ আহমেদ এঁদের একজন। অনেকে আবার এই প্রতিবণীর্করণ কোনমতেই মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। এঁদের মধ্যে ছিলেন সম্প্রতি প্রয়াত লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় আমি বলেছিলাম, ফরাসি R বর্ণের দুটি উচ্চারণ আছে, একটি জিহ্বাগ্র ‘র’ ও অন্যটি জিহ্বামূল ‘খ’ এর কাছাকাছি কোন উচ্চারণ। দ্বিতীয়টি তথাকথিত প্রমিত উচ্চারণ ও প্রথমটি ব্যবহৃত হয় দক্ষিণ ফ্রান্স, কানাডার কোন কোন অঞ্চল, আফ্রিকা ও এশিয়ার ফরাসিভাষী উপনিবেশগুলোতে।
যারা R বর্ণকে ‘র’ হিসেবে উচ্চারণ করে থাকে তাদের কথা ভেবে বর্তমান সংস্করণে প্রমিত ‘খ’-এর পরিবর্তে ব্রাত্য ‘র’ ব্যবহার করা হলো। কুড়ি বছর আগে অন্য অনেকের মতো আমিও শুধু প্রমিতের পক্ষে ছিলাম। এখন আমি বিশ্বাস করি, প্রমিত ও অপ্রমিত একই বস্তুর দুটি রূপভেদ মাত্র, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক কারণে একটি প্রমিত হিসেবে স্বীকৃতি পায়, অন্যটি নানা কারণে সে সুযোগ পায় না।
‘র’ ব্যবহার করার আরও অন্তত দুটি কারণ রয়েছে। এক. বাংলা ‘র’ বর্ণের তিন তিনটি রূপ আছে: র, র-ফলা ও রেফ, ‘খ’ বর্ণের এই সুবিধাগুলো নেই। দুই. আমার পূর্ববর্তি অন্য অনুবাদকেরা ‘র্যাঁবো’ বানান ব্যবহার করেছেন। আমি এই পরম্পরা ভঙ্গ করেছিলাম, ইচ্ছা করে, ফরাসি R বর্ণের প্রমিত উচ্চারণের দিকে বাংলাভাষী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজনে।
বর্তমান সংস্করণে প্রতিবর্ণীকরণের পরম্পরা পুনস্থাপিত হলো। গত দুই দশকে বাংলা অঞ্চলের বহু পাঠক ফরাসি ভাষার সাথে কমবেশি পরিচিত হয়ে উঠেছেন এবং মিডিয়ার সর্বব্যাপীতার কারণে পাঠকদের বিশ্ববীক্ষাও বেড়েছে। আমি আশা করি, বাংলাভাষী অনেক পাঠক ইতিমধ্যে ফরাসি R বর্ণের উচ্চারণ-বৈচিত্র্য সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন, অনেকে ‘এখ্’ উচ্চারণেও অভ্যস্ত হয়েছেন।
সুতরাং যারা ‘এখ’ উচ্চারণ করতে পারেন তাদের পক্ষে ‘র্যাঁবো’-কে ‘খ্যামবো’ হিসেবে উচ্চারণ করা কঠিন হবে না, আর যারা তা পারেন না, তারা ‘র্যাঁবো’ বা ‘র্যামবো’ উচ্চারণ করবেন। ‘র্যাঁবো’ বানানে প্রমিত ও ব্রাত্য — এই দুই উচ্চারণগোষ্ঠীর কারই অসুবিধা হবে না বলে আমার বিশ্বাস।
একই যুক্তি ‘এর্নো’ বানানের পক্ষে ব্যবহার করা যায়। নামের প্রথম অংশ ‘আনি’ উচ্চারণে ই-ধ্বনী দীর্ঘ বটে, কিন্তু বাংলা একাডেমির বানানের নিয়মে বিদেশি শব্দে দীর্ঘ ঈ-কার ব্যবহার অবিধেয়।
সার্বিক বিচারে ‘আনি এর্নো’ হবে বাংলায় সর্বোত্তম প্রতিবণীর্করণ।
- লেখকের ফেসবুক পোষ্ট