আনি এ্যারনোকে নিয়ে ফ্রান্সে তেমন উচ্ছ্বাস নেই
রবিশংকর মৈত্রী: এই প্রথম আমি এমন একজন নোবেলজয়ী সাম্প্রতিক লেখকের লেখা নিয়ে কিছু লিখতে পারব, যাঁর লেখার সঙ্গে আমি একটু পরিচিত। আলেসের মিদিয়াতেক থেকে তাঁর তিনটি স্মৃতিচারণমূলক উপন্যাস পড়েছি। কিন্তু অনুমান করতে পারিনি, আমার অল্পচেনা লেখক আনি এ্যরনু নোবেল পুরস্কার পাবেন। ফরাসি ভাষা এখনও খুব ভালো বুঝি না বলেও এমনটা হতে পারে।
প্যারিস থেকে প্রায় আড়াইশো কিলো মিটার পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগরের নিকটবর্তী ছোট্ট শহর ইভেতো (Yvetot)। এখানে আনি কাটিয়েছেন তাঁর বৈচিত্র্যময় শৈশব কৈশোর।
পাঁচ থেকে আঠারো বছর বয়স সৃজনশীল মানুষের কাছে পরমকাল, আর পরমকালই কেটেছে ইভেতো শহরে। আনির (Annie Ernaux) লেখায় ইভেতো আর তাঁর জীবন সবচেয়ে সুন্দর কাতরতাপূর্ণ।
আজ ৬ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার সুইডিশ অ্যাকাডেমি থেকে আনির নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির ঘোষণা শুনে ফ্রান্সে কিন্তু বিশেষ কোনো সাড়া পড়েনি। তিন চারটি টিভি চ্যানেলে সামান্যই গুরুত্ব পেয়েছেন আনি। ফেসবুকে ফরাসিরা খুব একটা নেই, আনি এ্যারনোকে নিয়ে তেমন একটা উচ্ছ্বাস আলোচনাও নেই। (যতটা আমাদের মধ্যে হৈচৈ আছে তার দশ ভাগও নেই ফ্রান্স)। অবশ্য আনির বই বেস্টসেলারে মাঝে মাঝেই ছিল।
লেখকই একটা ভিন্ন সত্তা। নারী লেখক পুরুষ লেখক বলে মোটা দাগে কাউকে আলাদা করা ঠিক নয়। তবু তথ্যের খাতিরে বলছি, কোনো ফরাসি নারী সাহিত্যে এই প্রথম নোবেল পেলেন।
আনি এ্যারনু সাহিত্যের অধ্যাপক। নিভৃতচারী। তিনি কখনও গল্প খোঁজেন না। নিজের জীবন খুঁড়েই সর্বজনীন জীবনোপন্যাস লেখেন। সামাজিক অভিজ্ঞতা বিদ্বেষ দ্বন্দ্ব লজ্জা ঘৃণা খুব সহজ সাবলীলভাবে বর্ণে বর্ণে রচনা করেন আনি। গবেষণামূলক নৃতত্ত্বে তিনি আগ্রহী নন, স্বনৃতত্ত্বেই তাঁর সকল কৌতূহল।
ছোটো শহর এবং গ্রাম লেখককে ভাবতে গড়তে লিখতে সাহায্য করে বলে আমার ধারণা। আনি এ্যারনুকেও ফ্রান্সের ইভেতো শহর অনেককিছু দিয়েছে।
ইভেতো আলেসের চেয়েও ছোটো শহর। ঢাকায় আমি শুধু সংগ্রাম আর হৈচৈ করেছি, কিন্তু পাবনা আর আলেসে পেয়েছি জীবনানন্দ।
আনির লেখা লা প্লাস এবং মেমোয়া দ্যু ফি আমাকে কিছুটা হলেও নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
অভিনন্দন, অভিবাদন মাদাম আনি। ফেলিসিতাসিয়োঁ, সালুতাসিয়োঁ।
- লেখকের ফেসবুক পোষ্ট