বৃটিশ কলাম্বিয়াতে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের মিলনমেলা
মো: নাজমুল হাসান তপু : কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার এবং কম্পিউটার সায়েন্স প্রফেশনালদের (বেকবিসি) প্রাণবন্ত কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ গত ২০মে শনিবার বিকেলে একটি পটলাক পিকনিকের জন্য একত্রিত হয়েছিলেন। পিকনিক অনুষ্ঠানটি সারির বিয়ার ক্রিক পার্কে অনুষ্ঠিত হয় এবং মুহূর্তগুলি হাসি, সুস্বাদু খাবার এবং আনন্দদায়ক বন্ধুত্বে ভরা কথোকপকথনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার এবং কম্পিউটার সায়েন্স প্রফেশনালস অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সংগঠনটি সংক্ষপে বেকবিসি নাম পরিচিত যা ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে রেজিস্টার্ডকৃত বাংলাদেশী কানাডিয়ান প্রকৌশলীদের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় কানাডিয়ান-বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের পেশাজীবী দক্ষতা সৃষ্টি, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ সহ অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজের জন্য বৃটিশ কলাম্বিয়া স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে এই সংগঠনটি স্বীকৃতিও পেয়েছে।
মূলত পিকনিক অনুষ্ঠানটি দুপুর ১টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত একই সময়ে স্থানীয় বাংলাদেশী-কানাডিয়ান প্রকৌশলী রবিউল ইসলামের জানাজা নামাজের ব্যবস্থা করায় পিকনিকটি কিছুটা বিলম্বে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মরহুমের বিদেহী আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, অনুষ্ঠানের সূচনা দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৩ টায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে করে কমিউনিটির সদস্যরা বিশিষ্ট প্রকৌশলীকে সশ্রদ্ধ বিদায় জানানোর সুযোগ পান।
পটলাক পিকনিকে বাংলাদেশী প্রকৌশলী এবং কম্পিউটার সায়েন্স প্রফেশনাল সংগঠনের প্রায় ৪০ জন গন্যমান্য প্রকৌশলী ও তাদের পরিবারবর্গ উপস্থিত হন। সুগন্ধি বিরিয়ানি থেকে শুরু করে রসালো চিকেন এবং গরুর মাংসের বিভিন্ন খাবারের ঘ্রানে বাতাস সুরভিত হয়ে গিয়েছিল। এসব খাবার বাসা থেকে সদস্যবৃন্দ সংগ্রহ করে আনেন। এছাড়াও খাবারের পর ছিল সুস্বাদু ডেজার্ট আইটেম, মজাদার আইসক্রিম ও চায়ের সুব্যবস্থা। কয়েক ঘন্টার জন্য কানাডার এই পার্কটি যেন মিনি একটুকরো বাংলাদেশ পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
মনোরম আবহাওয়া পিকনিকটির জন্য নিখুঁত পটভূমি হিসাবে ছিল। সবুজ ঘাসের উপর চাদর বিছিয়ে গোল হয়ে গল্প করার ব্যবস্থা রাখা হয়। এছাড়া বাসা থেকে কাঠের বেঞ্চ ও চেয়ার নিয়ে আসা হয় আগত অতিথিদের জন্য। বাচ্চাদের পার্কের সবুজ ঘাসে এদিক ওদিক ছুটাছুটি ও খেলাধুলা করতে ব্যস্ত ছিল। আর প্রাপ্তবয়স্করা প্রাণবন্ত কথোপকথনে ব্যস্ত, তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান ভাগ করে নিচ্ছিলেন। পিকনিকটি বাংলাদেশী প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান সম্প্রদায়ের মধ্যে নেটওয়ার্কিং এবং সংযোগ বৃদ্ধির জন্য একটি দুর্দান্ত সুযোগ প্রদান করেছে।
প্রকৌশলী শামসুল হক, পিকনিকের অন্যতম উদ্যোক্তা, ও বেকবিসির ভাইস চেয়ার (অপারেশন্স) সদস্যদের অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও পিকনিকে উপস্থিত ছিলেন বেকবিসির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান, সেক্রেটারি বজলুল করিম, ভাইস চেয়ার (ফাইন্যান্স) কামরুজ্জামান, ভাইস চেয়ার (ইউনিভার্সিটি রিলেশন্স) নাজমুল হাসান তপু, ভাইস চেয়ার (কালচারাল) তারানা আহাম্মেদ, ভাইস চেয়ার (পাবলিক রিলেশন্স) শেখ সুমিত নূর সহ অসীম নাফিজ, ফাইয়াজ হোসেন, মোহাম্মদ ইলিয়াস, জাভেদ নাহিয়ান, মুনির হোসেন সহ আরো অনেক প্রকৌশলীবৃন্দ।
ভাইস চেয়ার (ইউনিভার্সিটি রিলেশন্স) নাজমুল হাসান তপু অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে বলেন, “আমাদের স্থানীয় প্রকৌশলী এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান পেশাদারদের কাছ থেকে সাড়া দেখে আমরা রোমাঞ্চিত। এই পিকনিক শুধুমাত্র একটি কমিউনিটি হিসাবে আমাদের বন্ধনকে শক্তিশালীই করে না বরং আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশীয় ভাতৃত্ববোধ প্রদর্শন করার সুযোগও দেয়। এই ধরনের ঐক্য এবং সৌহার্দ্যের সাক্ষী হতে পেরে আমি আনন্দিত। ”
ইভেন্টটি কমিউনিটির মধ্যে আসন্ন উদ্যোগ এবং ভবিষ্যতের সহযোগী প্রকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবেও কাজ করেছে। অনেক অংশগ্রহণকারী ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে বাংলাদেশী প্রকৌশলী এবং কম্পিউটার সায়েন্স পেশাদারদের অর্জনকে আরও কীভাবে প্রচার করা যায় সে সম্পর্কে তাদের অন্তর্দৃষ্টি এবং ধারণাগুলি আলোচনা করেছেন।
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারি শহরের বিয়ার ক্রিক পার্কে পটলাক পিকনিকের সময় বাংলাদেশী ইঞ্জিনিয়ার এবং কম্পিউটার সায়েন্স প্রফেশনালস অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সংগঠনটি তাদের অটুট মনোভাব এবং বন্ধুত্ব প্রদর্শন করে। এই পিকিনিকটি কেবল তাদের কৃতিত্বই উদযাপন করেনি বরং সবাইকে কমিউনিটির মূল্য এবং ঐক্যের শক্তির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। দিনটি শেষ হওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ ভবিষ্যতে আরো এমন অনুষ্ঠান উদযাপনে আবার দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় জানান।
লেখক: মো: নাজমুল হাসান তপু, পিএইচডি গবেষক, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যানকুভার, কানাডা