‘ঘর থেকেই বাংলা চর্চা বাড়াতে হবে’
শাহিদ মোবাশ্বের, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে : মাতৃভাষা বাংলা চর্চা আর বিকাশে কবিতা, গান উপন্যাস ইত্যাদির চর্চা ঘর থেকে শুরু করতে হবে। আর সেক্ষেত্র প্রথমে বাবা-মাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে বাংলা ভাষায় লিখিত অফুরন্ত রিসোর্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।
গতকাল ওয়াশিংটন ডিসি তৃতীয় বইমেলার শেষ দিনে “ঘরে ঘরে বাংলা চর্চা” শীর্ষক এক প্যানেল আলোচনায় আলোচকগণ এসব কথা বলেন। দৈনিক সমকালের ওয়াশিংটন ডিসি প্রতিনিধি শাহিদ মোবাশ্বের-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ঐ আলোচনা সভায় রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র সুবিধাবঞ্চিত জনগোস্ঠীর মধ্যে দারিদ্র ও বেকারত্ব বিমোচনে সরকারী সেবা কর্মসূচীর সাফল্য ও প্রায়োগিকতা নির্ণয় বিষয়ক গবেষক রায়হান আহমদ এবং ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হেল্থ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসের স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক অসমতা বিষয়ক পরিসংখ্যানিক গবেষণা পরিচালক ডক্টর সাদেক আর চৌধুরী এবং ওয়াশিংটন ডিসিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন সবুজ অংশগ্রহণ করেন।
রায়হান আহমদ বলেন, প্রবাসে ছেলেমেয়েরা তাদের সকল পাঠ্যপুস্তকের ইলেকট্রনিক কপি সহজেই ডাউনলোড করে পড়তে পারে যে সুযোগ বাংলা ভাষার পাঠ্যপুস্তকের ক্ষেত্রে একেবারেই সীমিত। এই সুযোগ বাড়াতে হবে। সেইসাথে বাংলা ভাষায় গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস ইত্যাদি সহজলভ্য করতে হবে। সর্বোপরি প্রত্যেক ঘর থেকে বাবা-মাকেই বাংলা চর্চা বাড়াতে হবে যার প্রভাব সন্তানদের মাঝে পড়বে।
সাদেক চৌধুরী বলেন, প্রবাসে ভিন্ন পরিবেশ আর সংস্কৃতিতে আমরা ছেলেমেয়েদের বড় করছি বিধায় মাতৃভাষা বাংলা চর্চা আমাদের জন্য আরও অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ! তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ যুগে যুগে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ আর জীবনধারা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছে। অথচ আমরা এই প্রবাসে অর্থবিত্ত আর জীবনের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের পরও আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে হারিয়ে ফেলছি এবং পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, ভাষার সাথে পরিচিত করতে ব্যর্থ হচ্ছি! বিষয়টি আমাদের জন্য বড় এক চ্যালেন্জ। আর এই চ্যালেন্জ মোকাবিলায় আমাদের ভাষা চর্চা অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি আমাদের ছেলেমেয়েদের ভালভাবে বাংলায় বলা, লিখা ও পড়া শিখাতে পারি তবে তারা নিজেরাই আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আচার-আচরণ সম্পর্কে জেনে নিতে পারবে। তাই ভালোভাবে ভাষা শিখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ! আর এই প্রচেষ্টা আমাদের ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের সাথে বাংলায় কথা বলতে হবে, আলোচনা করতে হবে, বাংলা নাটক, সিনেমা ইত্যাদি দেখতে হবে। তাদেরকে বাংলা স্কুলে পাঠাতে হবে। যেখানে বাংলা স্কুল নেই সেখানে বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। নিয়মিত স্কুলে বাংলাকে দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালাতে হবে।
সাজ্জাদ হোসেন সবুজ বলেন বাংলা ভাষা চর্চা ও বিকাশে আগামী প্রজন্মের মাঝে পাঠাভ্যাস গড়া এবং বাংলায় প্রকাশিত বই পড়ার গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। সেইসাথে টিভি চ্যানেলগুলোতে সঠিক উচ্চারণ চর্চার বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনার করতে হবে।
বইমেলায় ভয়েজ অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান রোকেয়া হায়দারসহ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও বাংলাদেশ থেকে আগত বিপুল সংখ্যক বইপ্রেমী গুরুত্বপূর্ণ ঐ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন।