এবারের লড়াই ভোটের, সুতরাং!
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক : বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ আগামী শনিবার ২২শে অক্টোবর সারাদেশে ‘গণ-অনশন’ ডেকেছে। বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে ক্ষমতাসীন সরকারি দল ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নির্বাচনী ইশতেহারে যে-সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, তা বাস্তবায়নের দাবিতে প্রত্যেক জেলা/মহানগর, থানা/উপজেলা/ পৌরসভায় সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন হবে। ঢাকায় শাহবাগ চত্বর ও চট্রগ্রামে আন্দরকিল্লা চত্বরে সকাল-সন্ধ্যা এ কর্মসূচি পালিত হবে।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীদ্র কুমার নাথ এ কর্মসূচি ঘোষণা করে যে ৭টি প্রতিশ্রুতি’র কথা বলেছেন, তা হচ্ছে: ১) সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, ২) বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, ৩) দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, ৪) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, ৫) অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপণ আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, ৬) পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং ৭) সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।
প্রশ্ন হলো, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত কোথায়? জানা যায়, তিনি ‘প্রষ্টেট ক্যান্সার’ রোগে আক্রান্ত, কলকাতায় চিকিৎসা চলছে। প্রাথমিক পর্যায়, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন। আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। একই সাথে আমরা আশা করি রানা দাশগুপ্ত-বিহীন ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি সফল হবে। ঐক্য পরিষদ সর্বদা আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছে। অথচ আওয়ামী লীগ ১৪বছর ক্ষমতায় থাকার পরও তাঁদের বারবার মাঠে নামতে হচ্ছে।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩.২৯ নম্বর পয়েন্টে “ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও অনুন্নত সম্প্রদায়” সংক্রান্ত অঙ্গিকারনামার ২য়-টি হচ্ছে, “জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হবে। সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রনয়ণ করা হবে।” এটি আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান সরকার-প্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার। সামনে নির্বাচন, এ সরকারের মেয়াদ শেষের দিকে, কেন নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হয়নি, এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
ক’দিন আগে আইনমন্ত্রী বেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের প্রয়োজন নেই’। বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, গতবছর কুমিল্লায় কিছুই হয়নি। মন্ত্রীদের বক্তব্য যদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন হয়, তবে বুঝতে হবে, হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের প্রতি সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই? এখন ভোট আসছে, সবাই হয়তো কিছু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবেন, এরপর ‘যেই লাউ সেই কদু’। অন্তত: গত ১৪বছর বারংবার সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
এবার দুর্গাপূজায় অশান্তি ঘটেনি, সেই আনন্দে হিন্দুরা দিশেহারা, সবাই সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাঁরা রামু থেকে ২০২১-শে ‘রক্তাক্ত শারদ’-র কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। হিন্দুরা বঙ্গবন্ধুকে একশ’ শতাংশ ভোট দিয়েছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন হয়েছিলো। হিন্দুরা শেখ হাসিনাকে একশ’ শতাংশ ভোট দেয়, এবং এজন্যে ২০০১ অত্যাচারিত হয়, অথচ সেই বিচারটাও পায়নি। হিন্দুরা কখনোই বঙ্গবন্ধু বা শেখ হাসিনা’র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেনি।
পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ কখনোই এর অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। ১৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগ হিন্দুদের একটি মুখ্য দাবিও পূরণ করেনি। বরং হিন্দুরা বারবার মৌলবাদীদের হাতে নির্যাতিত ও আক্রান্ত হচ্ছে, যার কোন বিচার পাচ্ছেনা। সামনে নির্বাচন, ঐক্য পরিষদ এবং অন্যান্য ধর্মীয়-জাতিগত সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে অন্তত: সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবিতে আন্দোলন ও সরকারের সাথে দেন-দরবার করতে পারেন।
নির্বাচনের আগে যদি এসব দাবি পূরণ না হয়, পরেও হবেনা, গত ১৪ বছরে হয়নি। লজ্জার কিছু নেই, ‘গিভ এন্ড টেক’ সমাজ-রাজনীতিতে অপরিহার্য। পুরো দেশ, পার্লামেন্ট সরকারের দখলে, সরকার চাইলে নিমিষে এসব দাবি পূরণ হতে পারে, প্রশ্নটা হচ্ছে, সরকারের সদিচ্ছা আছে কিনা? ওহে হিন্দু, জাগো, বকশিশ না, হিসাবের পাওনা চাও। না কাঁদলে মা-ও বাচ্চাকে দুধ দেয়না, তাই চাইতে হবে, মাঠে নামতে হবে, দাবি করতে হবে, প্রয়োজনে লড়াই করে দাবি আদায় করতে হবে। এবারের লড়াই ভোটের, সুতরাং!
guhasb@gmail.com;