Sun, Jan 23, 2022 1:22 PM
কাজী আফজাল আহমেদ কপিল: অনেক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টি ছেড়ে দিলেও জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাতটি বছর ওখানে শিক্ষক হিসেবে ছিলাম বলে এর কোন ভালো সংবাদ দেখলে যেমন আনন্দিত হই, খারাপ খবর দেখলে কষ্ট লাগে। খারাপ কিছু দেখলেও সাধারণত কোন মন্তব্য করা থেকে নিজেকে বিরত রাখি, সচেতনভাবে।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলী এতটা দূরে থেকেও সহ্য করতে পারছি না। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে সরাসরি উপাচার্যের সাথে দেখা করতে চাওয়া এমনকি অবরুদ্ধ করে রাখা আমাদের দেশে কোন বিরল ঘটনা নয়। সেজন্যে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীদের পেটানো, গুলি চালানো, গ্রেনেড মারার কথা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ ভাবতে পারে! আমি কল্পনাও করতে পারিনা। শিক্ষকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলাম। অন্তত দুবার শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে রাখলে তৎকালীন উপাচার্য এবং সিনিয়র শিক্ষকগন সহ সারারাত প্রশাসনিক ভবনে কাটাতে হয়েছিল। একবারও কারো মনে হয়নি পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের পিটিয়ে সেখান থেকে বের হতে হবে। এবার দেখলাম পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পেটানো তো হলোই, তাদেরই নামে গায়েবী মামলাও হল। ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ইত্যাদি বলে উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের উপরেই দায় চাপানোর চেষ্টা করলেন।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যারা মোটামুটি সিনিয়র শিক্ষক তাদের প্রায় সবাই আমার চেনা জানা। তাই আশা করছিলাম আমার চেনা শিক্ষকগণ এই সময়ে সর্বোচ্চ সহমর্মিতা নিয়ে পুলিশি নির্যাতনে আহত ও অপমানিত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অপমান তো শিক্ষকদেরও অপমান, বিশ্ববিদ্যালয়েরই অবমাননা। হয়তোবা তারা দাঁড়িয়েছেনও, আমি হয়তো জানিনা। যেটা পত্রপত্রিকায় জেনেছি, সেটা হল যে মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা পুলিশের হিংস্রতায় আহত হলো, অপমানিত হলো, কোন প্রতিকার না পাওয়ার কষ্টে আমরণ অনশনের পথ বেছে নিল, সেই মুহূর্তে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কি কি মন্তব্য করেছে সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আর এটাকে ইস্যু করে শিক্ষার্থীদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গেলেন। যে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করালেন তার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ করলেই হয়তো শিক্ষকগণ সম্মানিত হতেন।
একুশ বাইশ বছর আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেকটি আমরণ অনশন দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী আক্রমণে বিশ্ববিদ্যালয়টি তখন জর্জরিত ছিল। কেউ যখন কিছুই করছিল না বা পারছিল না, শিক্ষার্থীরা তখন জাতীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশন করে নিজেদের শিক্ষাজীবন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান রক্ষা করেছিল। ওই সময়ের সংগ্রামী কচি মুখগুলো আমার সারা জীবন মনে থাকবে।
আমি আশা করি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন সফল হবে। অনশনকারী শিক্ষার্থীরা যেন সুস্থ থাকে, গুরুতর কিছু ঘটে না যায়, এ প্রত্যাশা করছি। একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও চাই এ উপাচার্যের অপসারণ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে তার মন্তব্য উপাচার্য মহোদয়টির অসভ্য মানসিকতার পরিচয় পাওয়ার জন্যে যথেষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনে এমন ব্যক্তি কারো জন্যই নিরাপদ নয় বলে মনে করি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।
*লেখকের ফেসবুক পোষ্ট