Mon, Oct 4, 2021 7:36 AM
শওগাত আলী সাগর: বিতর্ক যেনো প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পিছু ছাড়ছে না। নির্বাচনের পর নতুন করে শপথ নেয়ার আগেই তিনি নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি।দেশের রেসিডেন্সিয়াল স্কুলগুলোয় আদিবাসী শিশুদের উপর পরিচালিত বর্বরতাকে স্মরণ করতে ঘোষিত ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন ‘ দিবসে রাষ্ট্রীয় কোনো আয়োজনে অংশ না নিয়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবকাশ কাটাতে গিয়েছিলেন। এই ঘটনা জাস্টিন ট্রুডোকে মুখোমুখি করে দিয়েছে অসংখ্য প্রশ্নের।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ছিলো প্রথম ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকন্সিলিয়েশন ‘ দিবস। ফেডারেল সরকার এই দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবেও ঘোষনা করে।দেশের রেসিডেন্সিয়াল স্কুলগুলোয় আদিবাসী শিশুদের উপর পরিচালিত বর্বরতাকে স্মরণ করতে ট্রুডোর লিবারেল সরকারই এই দিবসটি ঘোষনা করে। ফেডারেল পর্যায়ে এবং প্রতিটি প্রভিন্সে অত্যন্ত আবেগঘন পরিবেশে দিনটি উদযাপন করা হয়।
সারা দেশ যখন আদিবাসী শিশুদের উপর পৈশাচিক বর্বরতার স্মারক দিনটি উদযাপন করছিলো, সেখানে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। সরকারি- বেসরকারি কোনো অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নেই, বিষয়টি সবারই বিশেষ করে মিডিয়ার কাছে প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জাস্টিন ট্রুডোর যে দৈনন্দিন কর্মসূচী মিডিয়ায় পাঠানো হয়- তাতে উল্লেখ আছে- তিনি অটোয়ায় ‘প্রাইভেট মিটিং’ এ আছেন। প্রাইভেট মিটিং থাকলেও একটি জাতীয় উৎসবে তাঁর উপস্থিতি বা অংশ গ্রহণ থাকবে না- এটা কী ভাবে হয়!
এর মাঝে খবর আসে, জাস্টিন ট্রুডো তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৃটিশ কলম্বিয়ার একটি দ্বীপে অবকাশ কাটাতে গেছেন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সমুদ্র সৈকতে ট্রুডোকে দেখে ফেলে একজন সাংবাদিক। তিনি আলগোছে তাদের ভিডিও বন্দি করে ফেলেন। ব্যস, মিডিয়ায় হৈ চৈ পরে যায় । মিডিয়া খোঁজ নিয়ে জানতে পারে- ট্রুডোকে বহনকারী বিমানটি আসলে সকাল ৮টার কিছু পরেই অটোয়া ছেড়ে যায়। শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অবশ্য জানানো হয়- তিনি আগের সন্ধ্যায় আদিবাসীদের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, সকালে তিনি আদিবাসী পরিবারের অনেকের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এসব ছাপিয়ে একটি প্রশ্নই প্রবল হয়ে ওঠে- ঠিক এই দিনটিতেই তাকে অবকাশে যেতে হবে কেন? একদিন আগে কিংবা পরেও তো সেটি হতে পারতো!
এরই মাঝে খবর বেরোয়, ২ শতাধিক আদিবাসী শিশুর কবর চিন্হিত হয়েছিলো যেই এলাকায়, সেই এলাকাসহ দুটি আদিবাসী এলাকা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিলো ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন দিবসে তাদের সাথে সময় কাটানোর। দুটো এলাকাই বৃটিশ কলম্বিয়ায়। জাস্টিন ট্রুডো তাদের আমন্ত্রনে সাড়া দেননি। তিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সেই বৃটিশ কলম্বিয়ায়ই দ্বীপে অবকাশ কাটিয়েছেন।
দেশব্যাপাী তুমুল সমালোচনা আর মিডিয়ার তিরষ্কারের মুখে শেষ পর্যন্ত রোববার জাস্টিন ট্রুডো তাকে আমন্ত্রন জানানো আদিবাসী নেতাকে ফোন করে ক্ষমা চান। আদিবাসীরা তাকে ক্ষমা করে দিয়ে ট্রুডোর সাথে আদিবাসীদের ভবিষ্যতের প্রশ্নে নিবিড়ভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু কানাডীয়ানদের মনে যে ক্ষোভ এবং খেদ এই ঘটনায় তৈরি হয়েছে, সেটি এতো তাড়াতাড়ি শেষ হযে যাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন না। মিডিয়া ইতিমধ্যে প্রশ্ন তুলেছে-জাস্টিন ট্রুডো এটিকে তার ভুল হিসেবে স্বীকার করেন কী না। সামনে এই প্রশ্নটা আরো প্রবল হবে বলে ধারনা করা যায়।