Fri, Mar 19, 2021 12:57 AM
শোয়েব সাঈদ: এসট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়ে গত কয়েকদিন আমি বেশ কয়েকটি কলাম লিখেছি। এই ভ্যাকসিনটির সেফটি নিয়ে আমার নিশ্চিত পরিস্কার অবস্থান আর ভ্যাকসিনটিকে বিতর্কিত না করার আবেদন ছিল লেখাগুলোতে।
সম্প্রতি ভ্যাকসিনটি নিয়ে বৈশ্বিক বিতর্ক, বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান বিশেষ করে বেশ কিছু ইউরোপীয় দেশের তাড়াহুড়া করে ভ্যাকসিন ব্যবহার স্থগিতের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন জেগেছিল ভ্যাকসিনটি কি বৈশ্বিক রাজনীতি বা ব্রেক্সিট রাজনীতির শিকার?
ব্রিটেন সর্বপ্রথম এই ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দেয় এবং ইতিমধ্যে এক কোটির বেশী মানুষ ব্রিটেনে এই টিকা নিয়েছে। ব্রিটেন নিজ দেশের কারখানার উৎপাদিত ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে। ব্রিটেনের বাইরে ইউরোপে আর ভারতে এই ভ্যাকসিন উৎপন্ন হচ্ছে। ব্রিটেনের সাথে ইইউ দেশগুলোর ইইউতে ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়ে প্রথম দিকে কিছু ঝামেলা হয়েছিল।
ব্রিটেন প্রথম থেকেই এই ভ্যাকসিনের সেফটির পক্ষে কঠোর অবস্থানে আছে। ইউরোপে নানা বিতর্কের মাঝে কানাডাও ভ্যাকসিনের সেফটির পক্ষে কঠোর অবস্থানে। সম্প্রতি কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তের ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট অবস্থানে ভ্যাকসিনটির সেফটি আর কার্যকারিতা ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সব বয়সে নিশ্চিত করেছে।
এটি মনে হতেই পারে এই ভ্যাকসিনটি ইউরোপ বিশেষ করে ফ্রান্সের কাছ থেকে খুব সুবিচার পায়নি। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা নিয়ে একবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মন্তব্য জনগণের এই ভ্যাকসিনটিকে আস্থায় নিতে খুব সহায়ক ছিলনা। বিচ্ছিন্নভাবে একাধিকবার ভ্যাকসিনটি বয়স্কদের (৬৫+) দেওয়া যাবেনা বিষয়ে প্রচারণাও আস্থা তৈরিতে সহায়ক ছিলনা।
সম্প্রতি রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ে তথ্যে খুব তাড়াহুড়ো করে এক ডজনের বেশী ইউরোপীয় দেশের ভ্যাকসিনটিকে ওএসডি করা বা সাময়িকভাবে বসিয়ে রাখার বিষয়টি ছিল অনেকটা জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্তের ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট নিয়মে নয়।
গত এক সপ্তাহে মনে হচ্ছিল ভ্যাকসিনের সেফটি নিয়ে কানাডা ব্রিটেন একদিকে, ইইউ অন্যদিকে। জার্মানির মত একটি বুঝদার দেশের ফ্রান্সের সাথে একই সিদ্ধান্তে আমি একটু আশ্চর্য হয়েছি বটে।
ভ্যাকসিন নিয়ে জনগণের আস্থা তৈরির কাজটি বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। মহামারির কঠিন সময়ে রাজনীতিবিদদের ভ্যাকসিন নিয়ে মন্তব্য হওয়া উচিত ভীষণ দায়িত্বশীল। এটি না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ, জনগণ আর মানবতা। ইতিমধ্যেই এর নেতিবাচক প্রভাবে উন্নত দেশগুলোতে একাধিক চয়েজে এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ভোক্তাদের পছন্দে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পরিণত হয়েছে।
এই বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী ক্রমাগত বলে যাচ্ছেন “আপনাকে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, সেটিই হচ্ছে সেরা ভ্যাকসিন”।
গরমের দেশগুলোতে, দরিদ্র দেশগুলোতে চয়েজের সুযোগ নেই, আপাতত এসট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটিই একমাত্র ভরসা, সুতরাং ভ্যাকসিনের সেফটি নিয়ে দায়িত্বহীন আচরণ বুমেরাং হতে বাধ্য।
তবে দিন শেষে রাজনীতি, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব সব কিছু ছাপিয়ে উন্নত বিশ্বের উন্নত সংস্কৃতিতে বিজ্ঞানের হেরে যাবার সুযোগ নেই। কানাডা আর ব্রিটেনের সাথে ভ্যাকসিনটির সেফটি নিয়ে এখন একই লাইনে এসেছে ইউরোপ।
গতকাল এক প্রেস কনফারেন্সে ইউরোপিয়ান ড্রাগ রেগুলেটর ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি পরিস্কার করে বলেছে এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিরাপদ আর কার্যকরী। এই ঘোষণার পর ইতিমধ্যে জার্মান, ফ্রান্স এবং অন্যান্য ইউরোপিয়ান দেশগুলো এসট্রাজেনেকার টিকাদান শুরু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। যে এশীয় দেশগুলো ইউরোপের সাথে তাল মেলাতে গিয়েছিল, তাঁদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হচ্ছে।
এই ডেভেলপমেন্টের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র গতকাল কানাডাকে এসট্রাজেনেকার লক্ষ লক্ষ ভ্যাকসিন দেবার ঘোষণা দিয়েছে।
ভ্যাকসিনেশন আর স্বাস্থ্যবিধি যেখানে, আপদ নেই সেখানে।