Mon, Mar 15, 2021 8:55 PM
ড. শোয়েব সাঈদ: কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডু হেলথ কানাডা আর কানাডার বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে কানাডায় সেরাম-এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনটির সেফটি বিষয়ে নিশ্চিত করলেন। আজ মন্ট্রিয়লে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডু বলেন এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ। জাস্টিন ট্রুডু’র সাথে থাকা কুবেকের মুখ্যমন্ত্রী ফ্রাসোয়া লোগো বলেন এই ভ্যাকসিনে ঝুঁকি নেই এবং কুবেকের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ এই ভ্যাকসিনের সেফটি নিয়ে উদ্বিগ্ন নন।
কানাডায় এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের এখন পর্যন্ত পুরোপরি সরবরাহ হয়েছে ভারতের সেরাম ইন্সিটিউট থেকে যেটি কোভিশিল্ড নামে পরিচিত। কোভিশিল্ড এসট্রাজেনেকার সেরাম ভার্সন এবং এটি আলাদাভাবে হেলথ কানাডার কঠোর রেগুলেটরি অনুমোদন স্তর পার হয়ে এখন বিতরণে আছে।
এখানে প্রণিধানযোগ্য যে বাংলাদেশ সেরামের এই কোভিশিল্ডের টিকা দেওয়া হচ্ছে এবং বাংলাদেশীদের এই কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডু নিশ্চিত করেন রক্ত জমাট বাঁধার ইস্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপের এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের বিশেষ লটটি কানাডায় প্রবেশ করেনি।
অতি সম্প্রতি এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সেফটি নিয়ে কিছু ধারণাগত উদ্বেগের ফলে ইউরোপের অনেক দেশ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভ্যাকসিনটির ব্যবহার সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে এবং উদ্বেগের কারণটি তদন্ত করছে।
যুক্তরাজ্যে এক কোটির বেশী মানুষ এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়েছে কোন গুরুতর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়া। এই পর্যন্ত ইইউতে ৫০ লক্ষ মানুষ এই এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিয়েছে, যার মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনার সাথে সংযোগ ঘটেছে ৩০টি ক্ষেত্রে, দুয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা আছে যদিও লিঙ্ক প্রমাণিত হয়নি।
কানাডার কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছেন ইউরোপের এসট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের বিশেষ একটি ব্যাচের রক্ত জমাট বাঁধার সেফটি ইস্যু নিয়ে। ভ্যাকসিনের সাথে জড়িত বিশেষজ্ঞরা ভ্যাকসিনের সাথে রক্ত জমাট সম্পর্কের বিষয়টি মানতে নারাজ।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মেডিসিন এজেন্সী এবং এসট্রাজেনেকা বলছে রক্ত জমাট বাঁধার সাথে ভ্যাকসিনের কোন সম্পর্ক নেই।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় প্রতিবছর রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটে মিলিয়নের মত। ভ্যাকসিনের সাথে লিঙ্ক করার আগে এই পরিসংখ্যানটির দিকে তো তাকাতে হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় ৩৩ কোটি মানুষের ক্ষেত্রে ১০ লক্ষ ঘটনার বিপরীতে দেড় কোটি ভ্যাকসিনেশনে ৩০টি ঘটনার পরিসংখ্যানগত গুরুত্ব না থাকলেও জননিরাপত্তা আর জনস্বাস্থ্যের স্বার্থেই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
রক্ত জমাট বাঁধার উদ্বেগটি এখনো প্রমাণিত নয়। তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশনে যে কোন পণ্যের গণ-উৎপাদনে দুয়েকটি লটের বা ব্যাচের সমস্যা নতুন কিছু নয়। কোয়ালিটি রিভিউ পদ্ধতিতে সমস্যার কারণ আর সমাধান বের হয়ে আসে।
কানাডার কর্তৃপক্ষ আর মিডিয়া এই ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ে চমকের চাইতে সত্যানুসন্ধানে বরাবরই ভীষণ দায়িত্বশীল।
বাংলাদেশের টিভি টকশো গুলোতে বিজ্ঞানের ফ্যাক্টের চাইতে চেনামুখে অতি কথন বিভ্রান্তি তৈরি করছে। সংক্রমণ বাড়ার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা তৈরি হচ্ছে।
শিক্ষা, পেশা আর চর্চায় যারা বিশেষজ্ঞ তাঁদের মতামতটা জরুরী এবং শেষতক তাঁদের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণটি টিকে থাকে।
লেখক: ড. শোয়েব সাঈদ, বাংলাদেশি কানাডীয়ান অনুজীব বিজ্ঞানী