Tue, Nov 24, 2020 4:03 PM
জিনাত জাহান: প্রিয় ক্রিসেন্ট টাউনবাসি বাঙালি ভাই ও বোনেরা, আমরা এই ক্রিসেন্ট টাউনে গত শতাব্দী থেকে বসবাস করছি, আমরা এখানে বড় হয়েছি, এখানে আমাদের বাচ্চাদের বড় করছি, এখানের স্কুল-কলেজ, অফিস থেকে গ্রোসারী শপ সবখানেই আমরা বাঙালিরা আছি, আমাদের বাঙালিদের অবদান আছে। বাংলাদেশ থেকে কানাডা আসার পর আমরা বাঙালিরা এই ক্রিসেন্ট টাউন কেই আরেকটা ছোট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছি। আমরা এটাকে নিজেদের ঘর বলে পরিচয় দিচ্ছি, আর আজকে আমাদেরকে আমাদের এই ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
শুধু গত সাপ্তাহেই ৫০ টা বাঙালি পরিবারকে তাদের বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়, যেখানে ১৫০ জনের বেশি বাঙালি লোক ছিল।
কিছুদিন আগেই মি. জন টরি আমাদের এলাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে আসলেন এবং আমাদের শহিদ মিনার উদ্বোধন করে গেলেন। কিন্তু আমরা বাঙালিরাই যদি এই ক্রিসেন্ট টাউনে না থাকি তাহলে এখানে বাঙালিদের শহিদ মিনার দিয়ে কি হবে? শহিদ মিনার এর চাইতেও আমাদের জন্য যেটা বেশি প্রয়োজনীয়, মি. টরির আমাদের জন্য যেটা করা দরকার, তা হচ্ছে আমাদের বাঙালিদের মাথার উপর ছাদ নিশ্চিত করা। আর এটা করলেই আমাদের বাঙালি, এই কমিউনিটিতে বাঙালিদের অবদান এবং বাঙালি সংস্কৃতিকে সম্মান দেয়া হবে।
তবে শুধু পলিটিশিয়ানদের দোষ দিলেই হবেনা, আমাদের যার যার যায়গা থেকে সবাইকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা এখানে যারা থাকি সবাই কোন না কোন ভাবে আত্নীয় বা পরিচিত, আমরা যদি সবাই আমাদের অসহায় প্রতিবেশীর সাহায্যে এগিয়ে আসি, তাহলে কারো সাধ্য নেই আমাদেরকে আমাদের ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে এই COVID-19 কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আজকে আমি হয়ত সমস্যায় আছি, কালকে হয়তবা আপনি।
আমাদের সবার মিলিত প্রচেষ্টাই পারবে আমাদের সবাইকে এই COVID-19 মহামারির করাল থাবা থেকে রক্ষা করতে।
আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা কারা, আমাদের ইতিহাস কি? আমরা আমাদের ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি, মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধ করেছি, কিন্তু কখনই অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনাই, আমাদের ন্যায্য পাওনা ছিনিয়ে আনতে পিছপা হই নাই।
আজকে এই কঠিন সময়ে আমাদের আবার প্রমাণ করতে হবে আমরা কারা।
আজকে এইসব লোভী বাসার মালিক আর রাজনীতিবিদরা মিলে আমাদেরকে আমাদের বাসা থেকে উচ্ছেদ করার পায়তারা করছে, আমাদের দুধের বাচ্চা, বৃদ্ধ বাবা-মা সহ আমাদেরকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। এইসব লোভী বাসার মালিকদের দেখিয়ে দিতে হবে আমাদের বাঙালিদেরকে আলাদা করা এত সোজা না, আমরা জানি কিভাবে আমাদের ভাইয়ের সাথে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসতে হয়। আর আজকে যদি আমরা তা না করি, তাহলে কালকে আমরা আয়নায় নিজেদের মুখ দেখব কেমনে?
লেখকের ফেসবুক পোষ্ট