Thu, Nov 5, 2020 11:37 AM
সোহেল মাহমুদ: মার্কিন নির্বাচনে জনগণের ভোটের পরেও কেন ইলেকটোরাল কলেজ নামে একটা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা হয়, এ নিয়ে কৌতূহল আছে অনেকের। জনগণ ভোট দেয়। যিনি বেশি ভোট পান, তিনি যে নির্বাচিত হবেন এমন কোন গ্যারান্টি নেই দেশটায়। ২০১৬ সালে ত্রিশ লাখেরও বেশি ভোট পেয়ে যেভাবে হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হতে পারেন নি। পপুলার বা জনগণের ভোটের সাথে ইলেকটোরাল ভোটের সংঘর্ষ হয়েছে ৫ বার। ১৮২৪, ১৮৭৬, ১৮৮৮, ২০০০ এবং ২০১৬ সালে। এ নির্বাচনগুলোতে জনগণের বেশি ভোট পেয়েও সেই প্রার্থীদ্বয় প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারেন নি।
ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেমটা নিয়ে বিতর্ক বেড়েছে ২০০০ সালের পর। ২০১৬ সালে এ বিতর্ক ডালপালা মেলেছে বহুদূর। সেইসাথে, নির্বাচনে কারচুপির প্রসঙ্গটাও এসেছে সামনে। উলঙ্গ কায়দায়। বলা হয়, নিকট অতীতের সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ছিলো সেটি। এর ওপর, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যও ছিলো সে নির্বাচন নিয়ে কৌতূহল আর সন্দেহের কারণ। সাধারণের মনে এ ধারণা শক্ত হয়ে গিয়েছিলো যে, ২০২০ সালের টার্মটাও ট্রাম্প যেই করে হোক নিজের করে নেবেন। সে যাই হোক, নির্বাচন হয়েছে, এবং আবারো সামনে চলে এসেছে ইলেকটোরাল কলেজ প্রসঙ্গ। অনেকে আগ্রহ বেড়েছে এ ব্যবস্থা কি জানার। কারো কারোর চরম বিরক্তি এ ব্যবস্থার প্রতি। ভোট শেষ হবার পর থেকে টানটান উত্তেজনায় জমিয়ে রেখেছে সাধারণ মানুষকে। আসলে, গোটা বিশ্বের মানুষকে।
ইলেকটোরাল ভোটের কারণে সাধারণ মানুষের ভোট দেয়ার আনন্দটা পানসে হয়ে যায়। কেউ কেউ যুক্তি দেখাচ্ছেন, জনগণ যেখানে গণতন্ত্রের চালিকাশক্তি, সেখানে তাদের মতামতকে ছাপিয়ে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা একটা সামন্তবাদী ধারণা। এলিটশ্রেণীর গুরুত্ব ধরে রাখতে এ ব্যবস্থা।
এ পদ্ধতির বিরুদ্ধবাদীদের আরো নানা যুক্তির বিপরীতে বলা হয়, ইলেকটোরাল কলেজের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কংগ্রেসের ক্ষমতায় রাশ টেনে ধরা হয়। একপক্ষ চাইছিলেন, কংগ্রেসের মাধ্যমে এ নির্বাচন হোক। অন্যপক্ষের দাবি ছিলো, প্রেসিডেন্ট আর ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন জনগণের ভোটে। সংবিধান তৈরির সময় দুইপক্ষের এ মতকে উপেক্ষা না করে একটা ভারসাম্য তৈরির জন্য চালু করা হয় ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থা। সাথে যুক্তি দেখানো হয়, দুই পক্ষের দাবির যে কোন একটি মেনে নেয়া হলে অল্প জনসংখ্যার স্টেটগুলো শুধু ভোটের রাজনীতির কারণে অবহেলিত হবে। গুরুত্ব পাবে বেশি জনসংখ্যার স্টেট। ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার কারণে ছোটবড় সব স্টেটের সমান গুরুত্ব এখন। যুক্তি যাই হোক, মার্কিনীদের অনেকের কাছেও এখনো এই ইলেকটোরাল কলেজ কি, কিভাবে কাজ করে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা নেই।
নিউইয়র্কে বসবাসরত সাংবাদিক সোহেল মাহমুদের ফেসবুক পোষ্ট