Thu, Oct 26, 2017 11:58 PM
নতুনদেশ ডটকম: কানাডার হাউজ অব কমন্সের বিরোধী দলীয় নেতা এবং কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এন্ড্রু শিয়ার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখার জন্য চীনের উপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ওই অঞ্চলের প্রভাবশালী শক্তি চীনের ভূমিকা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব না। কাজেই আমি প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর প্রতি আহ্বান জানাবো, কানাডার সঙ্গে চীনের যে ব্যবসায়িক, সামরিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে তা কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের উপর চাপ প্রয়োগ করুন।
দলীয় নেতার বক্তব্যের সঙ্গে সুর মিলিয়ে প্রভাবশালী সিনেট সদস্য, মানবাধিকার বিষয়ক সিনেট কমিটির চেয়ার সালমা আতাউল্লাজান এবং সংসদ সদস্য গার্নেট জিনুইসও একই প্রস্তাব করেন। দুজনেই বলেন, সরকারের বিভিন্ন ফোরামে তারা চীনকে চাপ দেওয়ার প্রস্তাব তুলেছেন কিন্তু লিবারেল সরকার এই ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে স্কারবোরোর একটি হোটেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, বিভিন্ন কমিউনিটি মিডিয়ার সম্পাদকদের নিয়ে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ সভায় তাঁরা এই মতামত ব্যক্ত করেন। ডনভ্যালি ইষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে অন্টারিও কনজারভেটিভ পার্টির এমপিপি প্রার্থী এরশাদ চৌধুরী এই ভোজ সভার আয়োজন করেন।
অন্টারিও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা এরশাদ চৌধুরী ছাড়াও এতে ইসহাক মোহাম্মদ,কানাডা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক আবু শামীম আরিফ, নতুনদেশ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর উপস্থিত ছিলেন।
এন্ড্রু শিয়ার তার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সমালোচনা করে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যূতে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনের প্লাটফরম ব্যবহার করে তিনি এই ব্যাপারে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এতিহাসিক ভূমিকা রাখতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেখানে রোহিঙ্গা প্রশ্নে একটি বাক্যও উচ্চারন করেননি।
এন্ড্রু শিয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা বোঝার জন্য বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়েছেন। এই পর্যায়ে এসে আর জানা বোঝার কি আছে? সারা বিশ্ব এর মদ্যে রাখাইনে সংঘটিত বর্বরতার খবর জেনে গেছে। নতুন করে এ নিয়ে আর জানা শোনার কি আছে? তিনি বলেন, আরো এক মাস আগে এই বিশেষ দূত নিয়োগ দিলে সেটি অর্থবহ হতো। কানাডীয়ানরা কেবল পরীক্সা নিরীক্সা বা তথ্য সংগ্রহ চায় না, তারা কাজ দেখতে চায়। রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে কানাডার কাজ দেখতে চায়।
রাখাইনে যা হচ্ছে- তা আসলে গণহত্যা, কিন্তু কানাডা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে গণহত্যা বলছে না কেন জানতে চাওয়া হলে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ঘটনা যা ঘটছে তার প্রকাশে যথাযথ শব্দ ব্যবহার করাই শ্রেয়। আমরা কনজারভেটিভ পার্টি কেবল কানাডাই নয়, বিশ্বের যে কোনো স্থানে মানবাধিকার লংঘিত হলে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। আমরা মনে করি রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চলছে। তিনি বলেন, এ নিয়ে সরকারের সাথে আমরা কথা বলেছি। সরকার মনে করে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে গণহত্যা টার্ম ব্যবহার না করা পর্যন্ত কানাডা এটিকে গণহত্যা বলবে না। আমরা সরকারের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করেছি। আমরা বলেছি, ঘটনা যা তাই বলতে হবে, অন্য কারো বলে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করা কানাডীয় বৈশিষ্ট্য না।
মানবাধিকার বিষয়ক সিনেট কমিটির ডেপুটি চেয়ার সালমা আতাউল্লাজান তাঁর বক্তৃতায় বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যূ সমাধানের জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে চীনকে চাপ দিতে হবে। বিশেষ দূত বা প্রতিনিধি পর্যায়ে সমাধানের জায়গায় এটি আর নেই। তিনি বলেন, সিনেট কমিটিতে সরকারের প্রতিনিধিদের বারবার ডেকেছি, মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে ডেকেছি, তাদের কাছ থেকে বক্তব্য শুনেছি। প্রধানমন্ত্রীর মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত বব রে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশকে ফিরে এলে তাকেও কমিটিতে ডাকবো, তার কাছেও তথ্য চাইবো। কিন্তু তার আগে সেখানে নির্যাতন বন্ধের উদ্যাগ নিতে হবে।
কনজারভেটিভ এমপি গার্নেট জিনুইস বলেন, প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন, এটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সরাসরি ভূমিকা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কোনো অগ্রগতি হবে না। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
ডনভ্যালি ইস্ট নির্বাচনী এলাকার এমপিপি প্রার্থী এরশাদ চৌধুরী তাঁর বক্তৃতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য লিবারেল সরকারের উপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য কনজারভেটিভ শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান।