Wed, Oct 25, 2017 11:43 PM
(কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এজেন্ট এর শ্মরণাপন্ন হয়েছিলেন তিনি। এজেন্ট তাকে ভুয়া অফার লটার ধরিয়ে দিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তার সেই প্রতারিত হওয়ার কাহিনী লিখেছেন তিনি নতুনদেশ এর পাঠকদের জন্য। বোধগম্য কারনেই তার নাম পরিচয় প্রকাশ না করে কাহিনীটি প্রকাশ করা হলো। লেখার সাথে ছবিটি মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। )
বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূয়া অফার লেটার দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতারণা চোখে পড়ার মতো বেড়ে গিয়েছে। আমি নিজেই এর স্বীকার! উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে জানুয়ারিতে IELTS দিয়েছিলাম। সেখানেই একজনের সাথে পরিচয় হয়, যে কিনা আমাকে এই তথাকথিত এজেন্সির ঠিকানা দেয় ।
আমি যে সময় গিয়েছিলাম তখন বেশির ভাগ কলেজ এবং ভার্সিটি তাদের ডেডলাইন পার করে ফেলেছে (১ মার্চ) এবং আমার ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট আমার কাছে ছিলোনা । আমাকে দালাল বললো, এটা কোনো সমস্যা না। সে চাইলে ভার্সিটির সাথে কথা বলে ম্যানেজ করে নিতে পারবে। আমাকে বলা হলো, এপ্লাই করার ১ সপ্তাহের মধ্যেই অফার লেটার দিয়ে দিবে। কিন্তু, সেলুকাস! দিন যায়, মাস যায় কিন্তু অফার লেটার আসেনা!এরই মধ্যে আমার সার্টিফিকেট চলে আসে। (আমার প্রয়োজনীয় ফাইল কমপ্লিট)
এরই মধ্যে জুন মাস শেষ হয়ে যায়, যখন ফল সেমিস্টারে এপ্লাই করার প্রশ্নই আসেনা! ৫ দিন পর আমাকে একটা লেটার দিলো, আমিও খুশি খুশি বাসায় আসলাম! কিন্তু লেটারে যে আইডি আছে ওটা দিয়ে একাউন্ট লগইন হচ্ছিলো না! খুব খটকা লাগলো এটা দেখে! জিজ্ঞেস করলাম কেনো হচ্ছে এমন! সে আমাকে বললো অনেকেরই হচ্ছে, শুধু আমার না।
যাইই হোক, ফাইল সাবমিট করার সময় দেখলাম আমার ফাইলে আরেকটা অফার লেটার, যেটা আমাকে দিয়েছিলো আগে, সেটা না। সেইম আইডি কিন্তু ভিন্ন স্টুডেন্ট নাম্বার! আবার খটকা লাগলো! ভার্সিটিতে মেইল দিলাম, অফার লেটার সহ দিয়ে দিলাম। কিন্তু ভার্সিটি আমার কাছ থেকে আবেদন তারিখ ইত্যাদি ইত্যাদি তথ্য জানতে চায়, যা আমার জানা ছিলো না। তাই অগত্যা, মেনে নিলাম।
প্রসঙ্গত, এরই মাঝে আমার কাছ থেকে টিউশন ফির নাম করে নিয়ে নিলো ৫ লাখ/ ৮ হাজার ডলার! (প্রতি সেমিস্টারে ৮৩০০ হওয়ার কথা) জিজ্ঞেস করলাম, কম দিলে প্রব্লেম হবেনা? সে বললো, কোনো সমস্যা নাই! যাইই হোক, এপ্লাই করলাম, ভিসা পেলাম। (ফেক লেটার দিয়ে কেমনে ভিসা হয়েছে আমি নিজেও জানিনা!)
বাংলাদেশ ছেড়ে আসার একদিন আগে আমাকে দালাল বললো, এই সেমিস্টারে ক্লাস শুরু হবেনা। কারণ, আমার ডিপার্টমেন্ট যথেষ্ঠ ছাত্র পায়নি! খুব অবাক লাগলেও এতো বড় ধাক্কা খেয়ে আর প্রশ্ন করার ইচ্ছা হলো না! আমাকে সে বললো কানাডা চলে যেতে,গিয়ে জানুয়ারিতে ক্লাস শুরু করতে। সে সব ম্যানেজ করে দিবে।
আমিও চলে আসলাম, এসে সিম কিনে প্রথমেই ফোন করলাম ভার্সিটিতে। যেটা জানতে পারলাম সেটা হলো আমাকে তারা ক্লাস শুরু করবে। আমি আমার আইডিতে লগ ইন করতে পারছিনা বলে তাদের জানালাম! তারা আমার থেকে ১ দিন সময় নিয়ে আমার স্টুডেন্ট আইডি নিলো। পরের দিন আমাকে ফোন করে জানানো হলো যে আমার এপ্লিকেশন এর টাকা জমা না দেওয়ায় আবেদন সম্পন্ন হয়নি!
শক খেলাম খুব বড়! কারণ,নিয়ম অনুযায়ী কানাডায় থাকতে হলে আমাকে কোনো ভার্সিটিতে/কলেজ/স্কুলে এনরোল্ড থাকতে হবে। দালালকে ফোন করলাম, সে ফোন ধরেনা। অনেকবার কল করার পর বললো টেনশন না নিতে সে আমাকে ১০ দিনের মধ্যে অফার লেটার নিয়ে দিবে।
আমি ছুটলাম নিকটস্থ কলেজে। তাদের ১ বছরের একটা কোর্সে এডমিশন নিয়ে নিলাম। এখন জানুয়ারি থেকে মেমোরিয়াল এ ক্লাস শুরু করবো, এটা আমি নিজেই করেছি! দালাল এর ধারে কাছে আর যাবোনা বলে তওবা করেছি, কাউকে যেতেও দিবো না।
এবার আসি দালাল কিভাবে ছাত্রদের ম্যানিপুলেট করে।
১. সে আপনাকে জীবনেও বলবেনা যে আপনি আবেদনের জন্য কোয়ালিফাইড না। আমাকে যে পরিচয় করে দিয়েছিলো সে নিজেই প্রতারণার স্বীকার! IELTS ছাড়া ৩ বার এপ্লাই করে ৩ বারই রিজেক্টেড।
এক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি? সর্ব প্রথম নিজেই এপ্লাই করেন। দালাল দের থেকে আলোকবর্ষ দূরে থাকেন। আপনি যে স্কুলে এপ্লাই করবেন ওদের ওয়েবসাইট থেকে নিজেই দেখে নিন প্রয়োজনীয় কোয়ালিফিকেশন! সেখানেই সব লিখা আছে । কোনো কিছু ওখানে না থাকলে ভার্সিটিতে মেইল দেন। উত্তর পাবেনই!
২. ভিসা হওয়ার আগে টাকা দেওয়া!
করনীয়: দালাল থেকে দূরে থাকেন। রেজিস্টার করার আগ পর্যন্ত টাকা Due হয়না! তাও দিতে চাইলে নিজে ব্যাংকে গিয়ে দেন। টেনশন মুক্ত থাকবেন!
৩. ফেইক অফার লেটার!
কারনীয়: যখনি দেখবেন আপনার আইডি দিয়ে লগইন হচ্ছেনা তাৎক্ষনিক ভাবে ভার্সিটিতে যোগাযোগ করেন, আপনার অবস্থা জানান। তারাই বলে দিবে আসল নাকি নকল! অথবা কানাডায় কেউ পরিচিত থাকলে তার দ্বারা ফোন করে জেনে নিন। কোনো অবস্থাতেই নকল অফার লেটার নিয়ে এপ্লাই করবেন না বা কানাডায় আসবেন না।
ধরা পড়লে ৫ বছর বা হতে আজীবন নিষিদ্ধ!
৪. ধরেন আপনি কানাডা চলে আসলেন ভেরিফাই না করেই! এসে বুঝতে পারলেন আপনি প্রতারিত হয়েছেন! এখন?
CIC কে ইনফর্ম করেন। অথবা দেশে চলে যান। যেহেতু আপনার ভিসা আছে আরেকটা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে আবার আসতে পারবেন।
আমরা একসাথে ২০-৩০ জন একই দালাল থেকে এপ্লাই করেছি । সম্ভবত ২ জন ছাড়া কারো ভিসা হয়নাই! একজনের থেকে টিউশন ফি নিয়ে জমা দেয় নাই! এখন সে প্রতিদিন ফোন করেও টাকা নিতে পারছেনা। অন্যদিকে ভার্সিটি তাকে জরিমানা করেই চলেছে!
তাই আবারও বলি, কাউকে টাকা দেওয়ার দরকার নাই, নিজেরটা নিজেই করেন। ভার্সিটি নিজের ডিসিশন নিজেই নিবে। এবং এপ্লিকেশন প্রসেসিং এর একটা প্রসেস আছে যেটা সাধারণত ১-১.৫ মাস লাগে। ৭ দিন বা ১০ দিনে অফার লেটার দিয়ে দেওয়ার কথা বললেই বুঝবেন এরা প্রতারক।।