Sun, Oct 13, 2019 6:26 PM
মাসুম চৌধুরী: কানাডায় বইছে ফেডারাল ইলেকশনের হাওয়া। যদিও বাংলাদেশের মত দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার নেই, নেই মাইকে উচ্চস্বরে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা। পেপার-পত্রিকায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর নেই, নেই একজনের ভোট আরেকজনের দিয়ে ফেলার ভয়। মোটকথা আমাদের মত ইমিগ্রেন্টদের মনে নির্বাচন নিয়ে ছোটবেলা থেকেই যে একটা ছবি মনের মধ্যে গেঁথে আছে কানাডার এই ইলেকশন তার ঠিক বিপরীত।
প্রতি নির্বাচনে হাজার হাজার নতুন ভোটার যোগ হচ্ছে। এর একটা ভাগ আসছে যারা এখানে বড় হয়ে ১৮ বছর অতিক্রম করছে, আর বাকি সবাই মোটামুটি ইমিগ্রেন্ট ভোটার যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কানাডায় পাড়ি দিয়েছে একটি নতুন শুরুর অন্বেষণে।
কানাডার রাজনৈতিক অবকাঠামো বাংলাদেশের মত না। জীবিকা অন্বেষণের ফাঁকে অনেকেরই এই ব্যবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকেনা বছরের পর এখানে থাকার পরেও। তাই আজকের এই লেখাটা নতুন-পুরাতন সব ভোটারদের জন্য।
২১শে অক্টোবরে সম্পন্ন হতে চলা ইলেকশনটি কানাডার ৪৩তম ফেডারাল নির্বাচন। যদি প্রভিন্সিয়াল আর মিউনিসিপাল সরকার আমাদের খুব কাছের মনে হয়, তবে ফেডারাল সরকার কানাডায় বসবাসকারী এবং এর বাইরে বসবাসকরা (যেমন দেশে থাকা আমাদের পরিবার) অনেক মানুষের জীবনের অনেক গুরুতপূর্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
প্রভিন্সিয়াল সরকারের অধীনে থাকা সার্ভিসগুলো আমাদের জীবনকে বেশ প্রভাবিত করে। এই যেমন স্বাস্থ্যসেবা, পড়ালেখা, চাকরির প্রশিক্ষণ, হাইওয়ে, ব্রিজ, কিছু প্রাকিতিক সম্পদ, পাবলিক ট্রান্সিট। অপরদিকে মিউনিসিপালিটিগুলো প্রভিন্সের অর্থায়নে এবং প্রোপার্টি ট্যাক্সের টাকা দিয়ে লাইব্রেরি, সিটি পার্ক, পানযোগ্য পানি, লোকাল পুলিশ এবং ময়লা আবর্জনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে।
তবে ফেডারাল সরকারের কাঁধে রয়েছে বেশ বড় কিছু দায়িত্ব যা পালন করার জন্য আমাদের ট্যাক্সের সিংভাগ তারাই খরচ করে। প্রতিবছর প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার এই ফেডারাল সরকারের হাত দিয়েই খরচ হয় যা আমাদের দেয়া ট্যাক্স আর বিভিন্ন ফিস থেকে আসে। এই সরকারের অধীনে প্রায় ৩৫০,০০০ কর্মচারি আছেন যার মধ্যে কানাডা রেভেনিউ এজেন্সিতেই আছে ৪৪,০০০ কর্মচারি। আর কানাডা রেভেনিউ এজেন্সিই কানাডার সর্ববৃহৎ সরকারি প্রতিষ্ঠান।
ফেডারাল সরকারের দায়িত্বগুলোর মধ্যে আছে ন্যাশনাল ডিফেন্স, ফরেন এফেয়ার্স, বর্ডার সার্ভিস, ইমিগ্রেশন, এমপ্লয়মেন্ট ইনস্যুরেন্স (ইআই), ওল্ড এইজ সিকিউরিটি, রেল এবং বিমান এর রেগুলেশন্স, রেইলওয়ে, পাইপলাইন, ব্যাংকিং সেক্টর, টেলিকমিউনিকেশন(রেডিও, টিভি, টেলিফোন, মোবাইলফোন এবং ইন্টারনেট), ফিসারিস, পোষ্ট অফিস, ক্রিমিনাল ল’ প্রণয়ন ইত্যাদি।
এছাড়াও ফেডারাল সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে এখানকার আদিবাসীদের অধিকার এবং জমি সংরক্ষণের। এর বাইরেও কানাডার আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স এই ফেডারাল সরকারের অধীনেই। কানাডার যেকোন প্রাকিতিক দূর্যোগ মোকাবেলা এবং কানাডার বাইরে কোন মিশনের দায়িত্বও এই ফেডারাল সরকারের। আরসিএমপি, ফেডারাল পুলিশও এই ফেডারাল সরকারের অধীনেই।
এছাড়াও কানাডার সুপ্রিম কোর্ট, কানাডিয়ান বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি, স্পাই এজেন্সি, সিক্রেট সার্ভিসেস, সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসেস এর দায়িত্বও ফেডারাল সরকারের এখতিয়ারাধীন।
ফরেন এফেয়ার্সের ইনচার্জও এর ফেডারাল সরকার। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা কানাডার এম্বাসি, কন্সোলেট অফিস, ট্রেড অফিস তারাই পরিচালনা করে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি, ফরেন এইড, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড রিলেশনের মত ব্যাপারগুলো ফেডারাল সরকারের এখতিয়ারাধীন।
তাই এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগে চিন্তা করুন কোন পার্টি এই দায়িত্বগুলো সবচেয়ে ভালভাবে পালন করতে পারবে। পাশাপাশি এটাও মনে রাখুন কোন পার্টি কি কি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এবং পূর্বে দেয়া প্রতিশ্রুতির কতটুকু পালন করেছে। কেননা আপনার দেয়া ভোটের উপরই নির্ভর করছে কানাডার আগামী ৪ বছরের ভাগ্য।
হ্যাপি ভোটিং।
মাসুম চৌধুরী: টরন্টো, কানাডা